সিলেট ০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নি খোঁ জ মানেই নয় মৃ ত, নয় হত্যা কা ণ্ডের শিকার….

ক্লিক সিলেট ডেস্ক
  • প্রকাশ: ১২:৫৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে
নি খোঁ জ মানেই নয় মৃ ত, নয় হত্যা কা ণ্ডের শিকার….


১৬৬০ সালের আগস্ট মাসের  কোন এক সকালে ৭৩ বয়সী সৌখিন জমিদার উইলিয়াম হ্যারিসন পাওনা টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও টাকা নিয়ে বাড়ি না ফিরলে হ্যারিসনের স্ত্রী দুশ্চিন্তায় পড়েন

তিনি তার কাজের ছেলে ‘জন পেরী’ কে পাঠান হ্যারিসনের খোঁজে। পেরী হ্যারিসন কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর রাত হয়ে যায়।

ভোর পর্যন্ত স্বামী ও কাজের ছেলে উভয়েই যখন না ফেরে তখন হ্যারিসনের স্ত্রী তার বড় ছেলে ‘এডোওয়ার্ড’ কে বলেন দ্রুত বেরিয়ে পড়তে স্বামী হ্যারিসন ও কাজের ছেলে জন পেরীর সন্ধানে।

এডওয়ার্ড অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেরী’কে পান।

কিন্তু তার বাবা হ্যারিসনের কোন সন্ধান জন পেরী দিতে পারেনি। সারাদিন ‘এডওয়ার্ড’ ও  ‘পেরী’ তন্ন তন্ন করে হ্যারিসন কে খুঁজতে থাকেন।

আশেপাশের সকল গ্রাম খুঁজে না পেয়ে ব্যার্থ হয়ে যখন ফিরছিলেন তখন হঠাৎ এক পর্যায়ে এডওয়ার্ড ও পেরী হঠাৎ দেখতে পান সড়কের এক পাশে পড়ে আছে হ্যারিসনের রক্তমাখা ক্যাপ, টাই ও শার্ট ।

হ্যারিসনের মরদেহ খুজে না পেলেও সবাই তখন ধরে নেন  হ্যারিসনকে কেউ টাকাপয়সার জন্যে খু ন করে লা শ গু ম করে ফেলেছে।

পরবর্তীতে সবার সন্দেহ হয় খুনটি কাজের ছেলে  ‘জন পেরী’ করেছে। কারন পেরী হ্যারিসন’কে খুঁজতে গিয়ে সারারাত বাহিরে ছিলো।

কিন্তু পেরী বলেছে ভিন্ন কথা। হ্যারিসন কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর রাত হয়ে যায় এবং সে পথ ভুলে যায়। তাই ফিরতে পারেনি।

যাহোক পেরীকে বন্দী করা হয়।

কিন্তু ক’দিন পর হঠাৎ  হ্যারিসনের নি খোঁ জ হওয়া বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নেয়। বিচারক’কে পেরী দেয় চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।

পেরী বলে তার মা ‘জোয়ানা’ ও ছোট ভাই ‘রিচার্ড’  টাকার জন্যেই হ্যারিসন কে হ ত্যা করেছে এবং তারা  লা শ পুকুরে ফেলে দিয়েছে। সে আরো বলে, এর আগেও বেশ কয়েকবার তার ভাই ও মা হ্যারিসনদের বাড়ি থেকে টাকা চু রি করেছে।

রাজস্বাক্ষী হয়ে নিজের আপন ”ভাই ও ‘মা’কে খু নি সাব্যস্ত করায় কারোরই আর সন্দেহ থাকেনা যে, নি খোঁ জ হ্যারিসনকে কারা খু ন করেছে। তারপরও ডে ড বডি না পাওয়ায় বিচারক রায় দিতে ইতস্তত ছিলেন।

চারিদিকে তন্নতন্ন করে হ্যারিসনের লা শ খুঁজতে লাগলো সবাই।

লা শ পাওয়া না গেলেও অবশেষে  “সারকামস্টেনসিয়াল এভিডেন্স” বা ‘পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি’ এর ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন গৃহভৃত্য পুরো পরিবারটিই হ্যারিসন  হ ত্যা র সাথে জড়িত। এক যোগে তাদের সবার ফাঁ সী কার্যকর করা হয়। 

নি খোঁ জ হওয়া কারো  লা শ পাওয়া না গেলে তিনি খু ন হয়েছেন বা মা রা গেছেন এমন সিদ্ধান্তে পৌছা আইনত জটিল এবং এ অভিযোগে কাউকে  শা স্তি দেওয়াটাও বিচার কার্যের জন্যে কঠিন এক বিষয় তথাপি  “সারকামস্টেনসিয়াল এভিডেন্স” বা ‘পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য প্রমাণাদির’ ভিত্তিতে  বিচারকদের সিদ্ধান্তে পৌছাতেই হয়।

কিন্তু হ্যারিসনের নি খোঁ জ হওয়া অত:পর হ ত্যা কা ণ্ডের রায়ে তিনজনের ফাঁ সী হওয়া সারা বিশ্বের বিচার কার্যের জন্যে আজো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কেনো?

আসুন জেনে নেই সেই ম র্মা ন্তিক কাহিনী।

নি খোঁ জ হ্যারিসনের হ ত্যা কা ণ্ডের শিকার এবং এ হ ত্যা কা ণ্ডের বিচারে অভিযুক্তদের মৃ ত্যমদন্ড হবার দুই বছর পর হঠাৎ করে উদয় হন উইলিয়াম হ্যারিসন।

সেদিন প্রজাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় হ্যারিসন  কতিপয় ছিঁচকে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন। তারা তার টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তাকে বিক্রি করে দেয় জলদস্যুদের কাছে।

এরপর হাত ঘুরে ঘুরে তার ঠিকানা হয় এক চিকিৎসকের বাড়িতে দাস হিসেবে। সেই চিকিৎসক এর মৃত্যু হলে তিনি মুক্তি পান এবং সোজা বাড়ি ফিরেন।

দুবছর পর নিনখোঁনজ স্বামীকে  দেখে তার স্ত্রী  হয়ে যান বাকরুদ্ধ। তিনি সু ই সা ইড করেন। কারন হ্যারিসনের জন্যে তার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজন নিরপরাধ এর ফাঁ সী হয়ে যায়।

প্রায় চারশো বছর আগের এ ঘটনাটি আজও সারা বিশ্বের বিচারকদের কাছে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

এজন্যে অনেক সময় বলা হয় ‘নো ডেড বডি, নো মা র্ডা র’ অথবা  নি খোঁ জ মানেই হ ত্যামকা ণ্ডের শিকার বা মৃ ত তা নয়।

যাহোক, তবে আইনে আছে কোন কারণ ছাড়াই কেউ যদি নুন্যতম ৭ বছর নি খোঁ জ হয়ে যান তাহলে পরিবারের দাবীর ভিত্তিতে, উত্তরাধিকার নির্বাচন বিষয়ক জটিলতা এড়াতে তাকে মৃ ত ঘোষণা করা যেতে পারে।

কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘদিন নি খোঁ জ হবার পর মৃ ত ঘোষিত হন, এবং তিনি যদি ফের ফিরে আসেন তাহলে তাকে জীবিত ঘোষণা করাও আরেক জটিলতা। তখন আদালতে গিয়ে তাকে জীবিত আছেন এ মর্মে নানান স্বাক্ষী  প্রমাণ দাখিল করতে হয় এবং জীবিত আছেন সে সার্টিফিকেট নিতে জয় যা বেশ কঠিন।

কারন কাগজপত্রে কেউ একবার মৃ ত ঘোষিত হয়ে গেলে তিনি জীবিত আছেন সেটা পুনরায় প্রমাণ করা অনেক অনেক জটিল একটি বিষয়।

লেখক: ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ।

ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নি খোঁ জ মানেই নয় মৃ ত, নয় হত্যা কা ণ্ডের শিকার….

প্রকাশ: ১২:৫৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪
নি খোঁ জ মানেই নয় মৃ ত, নয় হত্যা কা ণ্ডের শিকার….


১৬৬০ সালের আগস্ট মাসের  কোন এক সকালে ৭৩ বয়সী সৌখিন জমিদার উইলিয়াম হ্যারিসন পাওনা টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও টাকা নিয়ে বাড়ি না ফিরলে হ্যারিসনের স্ত্রী দুশ্চিন্তায় পড়েন

তিনি তার কাজের ছেলে ‘জন পেরী’ কে পাঠান হ্যারিসনের খোঁজে। পেরী হ্যারিসন কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর রাত হয়ে যায়।

ভোর পর্যন্ত স্বামী ও কাজের ছেলে উভয়েই যখন না ফেরে তখন হ্যারিসনের স্ত্রী তার বড় ছেলে ‘এডোওয়ার্ড’ কে বলেন দ্রুত বেরিয়ে পড়তে স্বামী হ্যারিসন ও কাজের ছেলে জন পেরীর সন্ধানে।

এডওয়ার্ড অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেরী’কে পান।

কিন্তু তার বাবা হ্যারিসনের কোন সন্ধান জন পেরী দিতে পারেনি। সারাদিন ‘এডওয়ার্ড’ ও  ‘পেরী’ তন্ন তন্ন করে হ্যারিসন কে খুঁজতে থাকেন।

আশেপাশের সকল গ্রাম খুঁজে না পেয়ে ব্যার্থ হয়ে যখন ফিরছিলেন তখন হঠাৎ এক পর্যায়ে এডওয়ার্ড ও পেরী হঠাৎ দেখতে পান সড়কের এক পাশে পড়ে আছে হ্যারিসনের রক্তমাখা ক্যাপ, টাই ও শার্ট ।

হ্যারিসনের মরদেহ খুজে না পেলেও সবাই তখন ধরে নেন  হ্যারিসনকে কেউ টাকাপয়সার জন্যে খু ন করে লা শ গু ম করে ফেলেছে।

পরবর্তীতে সবার সন্দেহ হয় খুনটি কাজের ছেলে  ‘জন পেরী’ করেছে। কারন পেরী হ্যারিসন’কে খুঁজতে গিয়ে সারারাত বাহিরে ছিলো।

কিন্তু পেরী বলেছে ভিন্ন কথা। হ্যারিসন কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর রাত হয়ে যায় এবং সে পথ ভুলে যায়। তাই ফিরতে পারেনি।

যাহোক পেরীকে বন্দী করা হয়।

কিন্তু ক’দিন পর হঠাৎ  হ্যারিসনের নি খোঁ জ হওয়া বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নেয়। বিচারক’কে পেরী দেয় চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।

পেরী বলে তার মা ‘জোয়ানা’ ও ছোট ভাই ‘রিচার্ড’  টাকার জন্যেই হ্যারিসন কে হ ত্যা করেছে এবং তারা  লা শ পুকুরে ফেলে দিয়েছে। সে আরো বলে, এর আগেও বেশ কয়েকবার তার ভাই ও মা হ্যারিসনদের বাড়ি থেকে টাকা চু রি করেছে।

রাজস্বাক্ষী হয়ে নিজের আপন ”ভাই ও ‘মা’কে খু নি সাব্যস্ত করায় কারোরই আর সন্দেহ থাকেনা যে, নি খোঁ জ হ্যারিসনকে কারা খু ন করেছে। তারপরও ডে ড বডি না পাওয়ায় বিচারক রায় দিতে ইতস্তত ছিলেন।

চারিদিকে তন্নতন্ন করে হ্যারিসনের লা শ খুঁজতে লাগলো সবাই।

লা শ পাওয়া না গেলেও অবশেষে  “সারকামস্টেনসিয়াল এভিডেন্স” বা ‘পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি’ এর ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন গৃহভৃত্য পুরো পরিবারটিই হ্যারিসন  হ ত্যা র সাথে জড়িত। এক যোগে তাদের সবার ফাঁ সী কার্যকর করা হয়। 

নি খোঁ জ হওয়া কারো  লা শ পাওয়া না গেলে তিনি খু ন হয়েছেন বা মা রা গেছেন এমন সিদ্ধান্তে পৌছা আইনত জটিল এবং এ অভিযোগে কাউকে  শা স্তি দেওয়াটাও বিচার কার্যের জন্যে কঠিন এক বিষয় তথাপি  “সারকামস্টেনসিয়াল এভিডেন্স” বা ‘পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য প্রমাণাদির’ ভিত্তিতে  বিচারকদের সিদ্ধান্তে পৌছাতেই হয়।

কিন্তু হ্যারিসনের নি খোঁ জ হওয়া অত:পর হ ত্যা কা ণ্ডের রায়ে তিনজনের ফাঁ সী হওয়া সারা বিশ্বের বিচার কার্যের জন্যে আজো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কেনো?

আসুন জেনে নেই সেই ম র্মা ন্তিক কাহিনী।

নি খোঁ জ হ্যারিসনের হ ত্যা কা ণ্ডের শিকার এবং এ হ ত্যা কা ণ্ডের বিচারে অভিযুক্তদের মৃ ত্যমদন্ড হবার দুই বছর পর হঠাৎ করে উদয় হন উইলিয়াম হ্যারিসন।

সেদিন প্রজাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় হ্যারিসন  কতিপয় ছিঁচকে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন। তারা তার টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তাকে বিক্রি করে দেয় জলদস্যুদের কাছে।

এরপর হাত ঘুরে ঘুরে তার ঠিকানা হয় এক চিকিৎসকের বাড়িতে দাস হিসেবে। সেই চিকিৎসক এর মৃত্যু হলে তিনি মুক্তি পান এবং সোজা বাড়ি ফিরেন।

দুবছর পর নিনখোঁনজ স্বামীকে  দেখে তার স্ত্রী  হয়ে যান বাকরুদ্ধ। তিনি সু ই সা ইড করেন। কারন হ্যারিসনের জন্যে তার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজন নিরপরাধ এর ফাঁ সী হয়ে যায়।

প্রায় চারশো বছর আগের এ ঘটনাটি আজও সারা বিশ্বের বিচারকদের কাছে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

এজন্যে অনেক সময় বলা হয় ‘নো ডেড বডি, নো মা র্ডা র’ অথবা  নি খোঁ জ মানেই হ ত্যামকা ণ্ডের শিকার বা মৃ ত তা নয়।

যাহোক, তবে আইনে আছে কোন কারণ ছাড়াই কেউ যদি নুন্যতম ৭ বছর নি খোঁ জ হয়ে যান তাহলে পরিবারের দাবীর ভিত্তিতে, উত্তরাধিকার নির্বাচন বিষয়ক জটিলতা এড়াতে তাকে মৃ ত ঘোষণা করা যেতে পারে।

কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘদিন নি খোঁ জ হবার পর মৃ ত ঘোষিত হন, এবং তিনি যদি ফের ফিরে আসেন তাহলে তাকে জীবিত ঘোষণা করাও আরেক জটিলতা। তখন আদালতে গিয়ে তাকে জীবিত আছেন এ মর্মে নানান স্বাক্ষী  প্রমাণ দাখিল করতে হয় এবং জীবিত আছেন সে সার্টিফিকেট নিতে জয় যা বেশ কঠিন।

কারন কাগজপত্রে কেউ একবার মৃ ত ঘোষিত হয়ে গেলে তিনি জীবিত আছেন সেটা পুনরায় প্রমাণ করা অনেক অনেক জটিল একটি বিষয়।

লেখক: ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ।

ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন