সিলেট ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক

ক্লিক সিলেট ডেস্ক
  • প্রকাশ: ১০:৩১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও নাহিদ ইসলাম।

উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক

বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন দুজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক। কঠোর আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তারা শপথগ্রহণ করেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেন

বঙ্গভবনে রাত সোয়া ৯টার দিকে ড. ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর এই সরকারের অন্য ১৬ উপদেষ্টার ১৩ জন শপথ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ঢাকার বনশ্রীর ছেলে নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাড়ি কুমিল্লায়।

১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলনকারীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। স্বৈরাচার খেতাব পাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। ১৬ আগস্ট দুপুরের দিকে রংপুর নগরীর লালবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে চেষ্টা করলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। তারা রাবার বুলেটের পাশাপাশি ছোড়ে গুলি। এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। এরপর সারা দেশ ফুঁসে ওঠে। ৯ দফা নেমে আসে এক দফায়।

বিভিন্ন স্থানে দমন-পীড়ন যাতে না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। এতে আরও বেগবান হয়ে ওঠে আন্দোলন। বিক্ষোভের দানা ছড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে ঘরে। আর তাতেই পতনের পথে হাটতে থাকে সরকার।

অবস্থা বুঝতে পেরে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নিতে শুরু করে হাসিনা সরকার। তবে, এক দফা থেকে কেউ পেছাতে নারাজ। এরপর গ্রেপ্তার ও গুম শিক্ষার্থীদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, শেষ রক্ষা হবে না বুঝতে পেরে গোয়েন্দা প্রধান হারুণ-উর-রশীদকে দিয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের ছয়জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থান থেকে নিয়ে তুলে নিয়ে তার কার্যালয়ে নেয়। অস্ত্রের মুখে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ান হারুন। এতে শেষ পরিণতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় স্বৈরাচার শাসনামল।

দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থী-জনতা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে অসহযোগ আন্দোলনে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেদিন ঢাকায় অন্তত দশজন, নরসিংদীতে ছয়জন, ফেণীতে আটজন, সিরাজগঞ্জে ২২ জন, মুন্সিগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় পাঁচজন, মাগুরায় চারজন, ভোলায় একজন, রংপুরে চারজন, পাবনায় তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, বরিশালে একজন, সিলেটে পাঁচজন, জয়পুরহাটে দুজন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন নিহত হন।

পরদিন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এদিন কারফিউ কড়াকড়ি করা হয়। অন্যদিকে, স্বৈরশাসকের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙে প্রথমে রাজধানীর শাহবাগে, পরে গণভবনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। জনতার সমুদ্রে ভেসে যায় সব বেরিকেড। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পথ ছেড়ে দেন। তার আগেই পালিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী। এরইমধ্যে আসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পালানোর খবর। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ পরিণত হয় উল্লাসে। রাজপথসহ অলিগলিও সেজে ওঠে রঙে রঙে। রাজধানী মুখরিত হয়ে ওঠে ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে, দেশ আজ সেজেছে’ স্লোগানে।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখায়ে শিক্ষার্থীরা ড. ইউনূসকে প্রধান হিসেবে দাবি করেন। তিনি তাদের দাবি মেনেও নেন। এরপর গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বৈঠক শুরু হয় রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে। কয়েক ধাপের আলোচনায় চূড়ান্ত হয় এই সরকারের উপদেষ্টারা।

উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যরা হলেন—ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, এ এফ হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ফরিদা আখতার, আ ফ ম খালিদ হাসান, নূরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থাকায় ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার, ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক, সুপ্রদীপ চাকমা পরবর্তীতে শপথ নেবেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক

প্রকাশ: ১০:৩১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক

বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন দুজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক। কঠোর আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তারা শপথগ্রহণ করেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেন

বঙ্গভবনে রাত সোয়া ৯টার দিকে ড. ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর এই সরকারের অন্য ১৬ উপদেষ্টার ১৩ জন শপথ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ঢাকার বনশ্রীর ছেলে নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাড়ি কুমিল্লায়।

১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলনকারীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। স্বৈরাচার খেতাব পাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। ১৬ আগস্ট দুপুরের দিকে রংপুর নগরীর লালবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে চেষ্টা করলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। তারা রাবার বুলেটের পাশাপাশি ছোড়ে গুলি। এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। এরপর সারা দেশ ফুঁসে ওঠে। ৯ দফা নেমে আসে এক দফায়।

বিভিন্ন স্থানে দমন-পীড়ন যাতে না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। এতে আরও বেগবান হয়ে ওঠে আন্দোলন। বিক্ষোভের দানা ছড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে ঘরে। আর তাতেই পতনের পথে হাটতে থাকে সরকার।

অবস্থা বুঝতে পেরে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নিতে শুরু করে হাসিনা সরকার। তবে, এক দফা থেকে কেউ পেছাতে নারাজ। এরপর গ্রেপ্তার ও গুম শিক্ষার্থীদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, শেষ রক্ষা হবে না বুঝতে পেরে গোয়েন্দা প্রধান হারুণ-উর-রশীদকে দিয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের ছয়জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থান থেকে নিয়ে তুলে নিয়ে তার কার্যালয়ে নেয়। অস্ত্রের মুখে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ান হারুন। এতে শেষ পরিণতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় স্বৈরাচার শাসনামল।

দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থী-জনতা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে অসহযোগ আন্দোলনে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেদিন ঢাকায় অন্তত দশজন, নরসিংদীতে ছয়জন, ফেণীতে আটজন, সিরাজগঞ্জে ২২ জন, মুন্সিগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় পাঁচজন, মাগুরায় চারজন, ভোলায় একজন, রংপুরে চারজন, পাবনায় তিনজন, কুমিল্লায় তিনজন, বরিশালে একজন, সিলেটে পাঁচজন, জয়পুরহাটে দুজন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন নিহত হন।

পরদিন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এদিন কারফিউ কড়াকড়ি করা হয়। অন্যদিকে, স্বৈরশাসকের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙে প্রথমে রাজধানীর শাহবাগে, পরে গণভবনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। জনতার সমুদ্রে ভেসে যায় সব বেরিকেড। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পথ ছেড়ে দেন। তার আগেই পালিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী। এরইমধ্যে আসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পালানোর খবর। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ পরিণত হয় উল্লাসে। রাজপথসহ অলিগলিও সেজে ওঠে রঙে রঙে। রাজধানী মুখরিত হয়ে ওঠে ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে, দেশ আজ সেজেছে’ স্লোগানে।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখায়ে শিক্ষার্থীরা ড. ইউনূসকে প্রধান হিসেবে দাবি করেন। তিনি তাদের দাবি মেনেও নেন। এরপর গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বৈঠক শুরু হয় রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে। কয়েক ধাপের আলোচনায় চূড়ান্ত হয় এই সরকারের উপদেষ্টারা।

উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যরা হলেন—ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, এ এফ হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ফরিদা আখতার, আ ফ ম খালিদ হাসান, নূরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থাকায় ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার, ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক, সুপ্রদীপ চাকমা পরবর্তীতে শপথ নেবেন।